নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : Sep 23, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

শহীদ কাদরী: নগরসভ্যতার অন্তরালে এক কবির অনন্ত যাত্রা

সাহিত্য ডেস্ক,

১৯৪২ সালের আগস্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াল অগ্নিশিখায় যখন দগ্ধ হচ্ছিল পৃথিবী, জাপানি বোমারু বিমানের আতঙ্ক যখন কলকাতার আকাশ ঢেকে রেখেছিল—ঠিক সেই সময়েই পার্ক সার্কাসের এক বাড়িতে জন্ম নেন এক শিশু, যিনি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বাংলা কবিতার অন্যতম নাগরিক কণ্ঠস্বর—শহীদ কাদরী।

শৈশব ও কবিতার বীজ

১৯৫২ সালে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন তিনি। নগরীর বেড়ে ওঠা চোখের সামনে দেখতে দেখতে গড়ে ওঠে তার কবিসত্তা। মাত্র ১১ বছর বয়সে রচিত ‘পরিক্রমা’ কবিতাতেই ধরা পড়ে ভবিষ্যৎ কণ্ঠের আভাস—এক অহংকারহীন যাত্রা, যেখানে নগরের প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি মুখ হয়ে ওঠে কবিতার উপাদান।

কবিতায় নগরের কণ্ঠস্বর

শহীদ কাদরীর কবিতা নাগরিক জীবনের অন্তর্গত হাহাকারকে শব্দে রূপ দেয়। ব্যস্ত নগরীর কোলাহল, রাতের নিঃসঙ্গতা, ট্রাফিকের আলো, বিজ্ঞাপনের বোর্ড কিংবা বারঘরের নেশাগ্রস্ত অন্ধকার—সবই তার কবিতায় প্রতীকে রূপ নেয়।

‘উত্তরাধিকার’ (১৯৬৭): বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা।

‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ (১৯৭৪): প্রেমকে সর্বজনীন ও দার্শনিক রূপ প্রদান।

‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ (১৯৭৮): নাগরিক নিঃসঙ্গতা ও স্বাধীনতা-পরবর্তী হতাশার শিল্পরূপ।

‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ (২০০৯): প্রবাসজীবন ও মাতৃভূমির টান।


তার কবিতায় বৃষ্টি রোমান্টিক আবেগ নয়, বরং সন্ত্রাসী শক্তি। প্রেম কেবল ব্যক্তিগত আবেগ নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিবাদ, সামাজিক সমালোচনা ও মানবিক সংহতির রূপ।

সমকালীনতার সীমানা ছাড়িয়ে

কাদরীর কবিতা বিশ্বসাহিত্যের সাথে সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যায়। বোদলেয়ার যেমন প্যারিসের গলি, এলিয়ট যেমন লন্ডনের ধূসর আকাশ খুঁজেছেন কবিতায়, তেমনই কাদরী ঢাকার রাস্তায় খুঁজেছেন আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব সংকট। তবে তার স্বাতন্ত্র্য হলো—হতাশার গভীরেও এক অদৃশ্য আশার আলো জ্বেলে রাখা।

শেষ প্রস্থান

২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন শহীদ কাদরী। কিন্তু তার কবিতা আজও আমাদের নাগরিক জীবনকে প্রতিফলিত করে, আমাদের শূন্যতা ও নিঃসঙ্গতাকে ভাষা দেয়। সমালোচক আব্দুল মান্নান সৈয়দ যেমন বলেছিলেন—প্রথম গ্রন্থে কাদরী ছিলেন ঘন ও গম্ভীর, পরবর্তী গ্রন্থে হয়েছেন কিছুটা শিথিল ও হাস্যোদ্বেল।

অনন্ত যাত্রা

শহীদ কাদরীর কবিতা আমাদের শেখায়—
“তুমি যদি থেকো আমার পাশে/তাহলেই কোনো ক্রন্দন থাকবে না কোথাও।”
এই সহজ পঙ্‌ক্তির গভীরে লুকিয়ে আছে দার্শনিক সত্য—মানবিক সম্পর্ক ও সংহতিই পারে আমাদের নগরজীবনের নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দিতে।

তিনি কেবল একজন কবি নন, আধুনিক নগরসভ্যতার মহাকবি, যার অনন্ত যাত্রা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বারবার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

কলমে: বাহাউদ্দিন গোলাপ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সহ গ্র

1

পানি পান করার এই ৪টি ভুল থেকে সাবধান, হতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁক

2

এশিয়ার সেরা একাদশে সাকিব আল হাসান

3

মেহেরবানি করে চাঁদাবাজি করবেন না, রাজশাহীতে কর্মী সম্মেলনে জ

4

ক্যারিয়ার ভিত্তিক পড়াশোনা: বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতির চাব

5

পদ্মার ভাঙনে বিলীন ফসলি জমি ও শ্মশানঘাট

6

ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন এক কথায় অবাস্তব এবং অসম্ভব: সারজিস আ

7

ভুঁড়ি কমাতে খেতে পারেন এই ৬ রকমের ফল

8

বিপিএলের দায়িত্বে আইএমজি

9

করোনাকালে বাড়লেও ক্রমেই কমছে স্টার্টআপে বিনিয়োগ, নীতি সহজ কর

10

অপু বিশ্বাসকে তামান্না ভাটিয়ার মতো লাগে : মিষ্টি জান্নাত

11

কোটালীপাড়ায় শিশু অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার, গ্রেফতার ১

12

সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে টাস্কফোর্স গঠন, সদস্য ১৩ জন

13

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও সংঘর্ষ, সহ-উপাচার্যসহ আহত ২০

14

দক্ষতা উন্নয়নে নজর কম, ফ্রিল্যান্সার তৈরির হিড়িক

15

নতুন বছরের শুরুতেই যেসব ফোনে বন্ধ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ

16

উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের পথে নুর

17

গোপালগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ৮ নেতার একযোগে পদত্যা

18

আসছে আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স: দাম ও নতুন ফিচার জানুন

19

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়া

20