ভয়েস অফ গোপালগঞ্জ ডেস্ক,
ভোরের আকাশে যখন হালকা লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে, তখন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার বিস্তীর্ণ বিল যেন জেগে ওঠে রঙিন স্বপ্নে। পানির বুক জুড়ে তখনও নিস্তব্ধ শাপলার কুঁড়ি। সূর্যের প্রথম কিরণ ছুঁয়েই তারা একে একে খুলে দেয় রঙিন মুখ। মুহূর্তেই বিলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে লাল শাপলার সমারোহ, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে বিছিয়ে দিয়েছে লাল গালিচা।
নৌকায় ভেসে এই ভোরের দৃশ্য দেখা মানেই অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়া। চারপাশ নিস্তব্ধ, কেবল পাখির ডাক আর পানির মৃদু ঢেউয়ের শব্দ। সেই নীরবতার মাঝেই ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে লাখো শাপলা। দূর থেকে মনে হয়, পুরো বিল লালিমায় ভেসে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, শাপলার আসল সৌন্দর্য দেখতে হলে ভোরবেলায় আসতেই হবে। দুপুর নাগাদ ফুলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, মুছে যায় রঙিন মায়া। তাই ভোরেই মানুষ নৌকা নিয়ে বের হন—কেউ ফুল সংগ্রহে, কেউবা শুধু প্রকৃতির এই বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপভোগে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আসলাম শেখ জানালেন, “ভোর ৪টায় নৌকা নিয়ে বের হয়েছিলাম। সূর্যের আলো ফুটতেই একসঙ্গে এত শাপলা ফুটতে দেখে মনে হলো, প্রকৃতি আমার চোখের সামনে নতুন করে জন্ম নিচ্ছে।”
শাপলার ভোর শুধু চোখের আরাম নয়, মনেও আনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির এমন মহিমান্বিত আয়োজন সত্যিই অনন্য অভিজ্ঞতা।
বর্ষায় জমে থাকা পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় এসব শাপলা। স্থানীয়দের মতে, অন্তত ২৫টির মতো বিল এখন ভরা লাল শাপলায়। সাধারণত এগুলো এক ফসলি জমি। বোরো ধান কাটার পর মাঠ ভরে ওঠে বৃষ্টির পানিতে, আর সেই পানিতেই প্রকৃতির দান হিসেবে জন্ম নেয় হাজারো শাপলা।
প্রতিদিনই ঢাকা, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসছেন পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে। নৌকায় ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন স্থানীয় যুবকেরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকছেন শাপলার দিকে। পর্যটকদের ভাষায়, “শহরের কৃত্রিম পার্ক নয়, এখানে প্রকৃতির আসল রূপ আছে। না দেখলে বোঝা যায় না, প্রকৃতি কত উদারভাবে তার রঙ ছড়িয়ে দিতে পারে।”
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, লাল শাপলার বিলকে ঘিরে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীদের জন্য বাড়ানো হবে নানা সুযোগ-সুবিধা।
মন্তব্য করুন